ঈসা
আল মসিহ ঈসা - عسيى আলাইহিস-সালাম ( عليه السلام ) | |
---|---|
عيسى إبن مريم | |
"ঈসা ইবনে মারিয়াম" (আলাইহিস-সালাম), আরবি ভাষার ইসলামী নকশালিপিতে লিখিত | |
জন্ম | আনু. ২-৭ খৃষ্টপূর্বাব্দ বাইতুল লাহাম (বর্তমান বেথেলহাম), ফিলিস্তিন |
অন্তর্ধান | আনু. ৩০-৩৩ এ.ডি গেথসিমানে, জেরুসালেম, রোমান সাম্রাজ্য |
ঈসা ইবনে মারিয়াম (আরবি: عيسى, প্রতিবর্ণী. ʿĪsā), যিনি খ্রিস্টধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বাইবেলের নূতন নিয়মে যিশু নামে পরিচিত, ইসলাম ধর্মে একজন অদ্বিতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নবী ও রাসূল (আল্লাহ বা একেশ্বরের বার্তাবাহক ও প্রচারক) হিসেবে স্বীকৃত।[১] ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কুরআনে ঈসা ও তার মা মরিয়ম (মেরি) সম্পর্কে অনেক বর্ণনা দেওয়া আছে। ইসলামে ঈসাকে "মসিহ" উপাধি দেওয়া হয়েছে, যার অর্থ "ত্রাণকর্তা"। কুরআন ও হাদিসে "সময়ের সমাপ্তি" সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনাবলির এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেন ঈসা। আল কুরআনে ঈসার মা মরিয়মকে উপজীব্য করে একটি সম্পূর্ণ অধ্যায় বা সুরা রয়েছে, যার নাম সুরা মরিয়ম।
ঈসার (আ.) জন্ম[সম্পাদনা]
আল কুরআনে অন্যান্য নবীদের মতো ঈসাকেও "আল্লাহ্র (একেশ্বরের) বাণী", "আল্লাহ্র ভৃত্য", "আল্লাহ্র বার্তাবাহক", ইত্যাদি নামে ডাকা হয়েছে। কিন্তু যে কারণে ঈসা ব্যতিক্রম, তা হল তার অলৌকিক জন্মগ্রহণ। কুরআনে ঈসার জন্মকে ইতিহাসের প্রথম মানব আদমের সৃষ্টি প্রক্রিয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে ঈসার প্রতিকৃতি ছিল আদমের প্রতিকৃতির মতো। আদমের মতোই ঈসাও আল্লাহর "হও" আদেশে জন্মগ্রহণ করেন। তবে ইসলামে বর্ণিত ঈসার জন্মকাহিনী খ্রিস্টধর্মে বর্ণিত যিশুর জন্মকাহিনী থেকে ভিন্ন। কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী বিবি মরিয়ম মরুভূমিতে গিয়ে একটি পামবৃক্ষের ছায়ায় অনেক কষ্টস্বীকার করে ঈসার জন্ম দেন।
ঈসার দেবত্ব[সম্পাদনা]
কুরআনে ঈসার জন্মকে অলৌকিক বলা হলেও তার দেবত্ব বা "ঈশ্বরের পুত্রসন্তান" জাতীয় বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ইসলামে একেশ্বর আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে উপাস্য মনে করা একটি গুরুতর পাপ, যার নাম "শির্ক" ("ঈশ্বরের অংশীদারিত্ব" পাপ)। যদিও খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলে ঈশ্বরের তিন রূপের কথা বলা নেই (পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মা), তা সত্ত্বেও খ্রিস্টধর্মের একটি অন্যতম বিশ্বাস ঈশ্বরের ত্রিত্ববাদকে কুরআনে কঠোর ভাষায় "ঈশ্বরনিন্দা" হিসেবে তিরস্কার করা হয়েছে। ঈসাকে প্রায়শই আল কুরআনে মরিয়মের পুত্র হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে ঈসার মানবত্বকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ঈসার বংশপরিচয় তার মা মরিয়মের মাধ্যমে ইসরায়েলি গোত্রের ইব্রাহিমের পুত্র ইসহাকের সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে।
ঈসার ক্রুশবিদ্ধকরণ[সম্পাদনা]
ঈসার ক্রুশবিদ্ধকরণের ব্যাপারেও কুরআনের বর্ণনা বাইবেল থেকে ভিন্ন। কুরআন অনুযায়ী যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়নি, যদিও আপাতদৃষ্টিতে এরকম মনে করানো হয়েছিল।[২] বলা হয় যে, ক্রুশবিদ্ধ করার জন্য যখন বাহক তাকে নিতে ঘরে প্রবেশ করে তখনই আল্লাহ তাকে উপরে তুলে নেন এবং বাহকের চেহারাকে ঈসা-এর চেহারার অনুরুপ করে দেন। ফলে ঈসা মনে করে ঐ বাহককে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে মারা যাওয়ার আগেই আল্লাহ ঈসাকে স্বর্গ বা জান্নাতে তুলে নিয়ে যান অর্থাৎ তিনি স্বর্গে আরোহণ করেন। ঈসা জান্নাতে বা আকাশে জীবিত অবস্থায় বিরাজ করছেন এবং শেষ বিচারের দিনের আগে তিনি আবির্ভূত হবেন।
ঈসার পুনরাবির্ভাব[সম্পাদনা]
"অপখ্রিস্টের" (মসীহ দাজ্জালের) আবির্ভাব ও এ সংক্রান্ত অভ্যুত্থানে ঈসার ভূমিকা নিয়ে অনেক হাদিস আছে। বলা হয়েছে ঈসা অপখ্রিস্টের আবির্ভাবের পরে নবী মুহাম্মদ -এর একজন উম্মত বা অনুসারী হিসেবে পুনরায় পৃথিবীতে অবতরণ করবেন এবং তারপর অপখ্রিস্টকে হত্যা করবেন। তারপর তার সন্তান হবে, তারপর তিনি আরও ৪৫ বছর জীবিত থাকবেন। তিনি সমস্ত পৃথিবীর শাসনভার গ্রহণ করবেন এবং পৃথিবীতে শান্তি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। সবশেষে তিনি একজন রাজা হিসেবে মৃত্যূবরণ করবেন এবং মুহাম্মদ সমাধি বা কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে। যে কারণে মদীনায় নবী মুহাম্মদ এর কবরের পাশে তাকে কবর দেয়ার জায়গা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিল যা এখনও বহাল আছে।
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ Smith, Cyril Glassé ; introduction by Huston (২০০১)। The new encyclopedia of Islam (Édition révisée. সংস্করণ)। Walnut Creek, CA: AltaMira Press। পৃষ্ঠা 239। আইএসবিএন 9780759101906।
- ↑ কুরআন ৪:১৫৭
আরও দেখুন[সম্পাদনা]
- যিশু (খ্রিস্টধর্মে ঈসার ভূমিকার বর্ণনা)